শীতে ভাসমান মানুষের দুর্ভোগ

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫ সময়ঃ ২:৫০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

Winterকুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে চলে এসেছে শীত। এই শীত অনেকের জন্যই বয়ে আনে আনন্দের বার্তা। কারণ, শীতকাল অনেকেরই পছন্দের একটি ঋতু। কেউ হয়তো শীতে ভ্রমণে যেতে ভালবাসেন, আবার কেউ হয়তো শীতে কোন স্টাইলের পোশাক পড়বেন সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বলতে গেলে, শীতকাল আমাদের মধ্যে অনেকটা উৎসবের আমেজ তৈরি করে। শীতে বাংলার প্রতিটি ঘরে খেজুরের রস আর পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে। কোনদিন কোন পিঠা খাওয়া হবে, ঘরে ঘরে সেটা নিয়ে চলে গুঞ্জন। কোনদিন কোথায় বেড়াতে যাবে, সেটা নিয়ে চলে আনন্দের ভাগাভাগি।

এত আনন্দের মধ্যে থেকে আমরা ভুলে যাই কিছু মানুষের কথা। ভুলে যাই, আমরা যতটা আনন্দে আছি, ঠিক ততটা বা হয়তো তার চেয়েও বেশি কষ্টে আছে কিছু মানুষ। প্রিয় পাঠক, বলছি শীতে ভাসমান মানুষের কথা। গভীর হয় রাত, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে শীতের তীব্রতা। ফুটপাত, রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও ফুটওভার ব্রিজের মানুষগুলো আরও গুটিসুটি হয়ে শোয়। গাঁয়ের উপর নেই কোন দামী কম্বল বা লেপ। একটি ভালো কাঁথাও নেই। চটের ব্যাগ বা ছেঁড়া কাঁথা দিয়েই চলে শীত কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু এতেই কি হয়? হার মানে এই তীব্র শীত?

তেজগাঁও রেলস্টেশনে থাকা প্রায় ৬০ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধা শীতের প্রকোপে কাঁপতে কাঁপতে ‘প্রতিক্ষণ ডট কম’-কে বললেন, শান্তি পাই না। ঠিকমতো শোয়ার জায়গা নেই। খেতে পাই না। কাঁথা নেই, বালিশ নেই। কষ্ট হয় অনেক। কী করব বলেন? গরিবের দুঃখের কপাল।

ফার্মগেটের ফুটপাতেই থাকেন মুক্তিযোদ্ধা সাদেক মিয়া। পরিবার-পরিজন নিয়ে নয়। দুটো কুকুরকে নিয়ে তার বসবাস। কুকুর দুটোকে কাঁথার ভেতর ঢুকিয়ে নিজেই কাঁপতে থাকেন শীতে। কুকুরগুলো এই শীত থেকে রক্ষা পেল, এটাই তার সান্ত্বনা। অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মশা কামড়ায়, বৃষ্টিতে ভিজি। ৭ বছর বৃষ্টিতে ভিজেছি আর মশা কামড়িয়েছে। কেউ দেখল না। মানুষ বেঈমানি করতে পারে কিন্তু কুকুর বেঈমানি করবে না। তাই আমি কুকুর পালি।’

আমাদের মধ্যে অনেক বিত্তবানরাই হয়তো একটি কাপড় কয়েকদিন পড়ে সেটি ফেলে দেয় কিংবা পছন্দ নাহলে সেটি রেখে আবার শপিংমলে রওনা দেয়। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কী? আপনার প্রতিদিনের কারণে-অকারণে খরচ করা অর্থের কিছু অংশ আপনার বাড়ির সামনের ফুটপাতে এই কনকনে শীতে কুঁকড়ে শুয়ে থাকা মানুষটির কতটা উপকার করতে পারতো? ভাবেননি, তাই না? যদি এখনো না ভেবে থাকেন, তাহলে আগে আপনার ঘুমিয়ে থাকা বিবেকটিকে জাগ্রত করুন এবং অন্যদেরকেও শীতে এই ভাসমান মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G